কুমিল্লা মেডিকেলে ৪ সংবাদকর্মী হামলার শিকার
আপলোড সময় :
২২-০৩-২০২৫ ১২:৩৮:৪৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২২-০৩-২০২৫ ১২:৩৮:৪৬ অপরাহ্ন
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে চার সংবাদকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২২ মার্চ) মধ্যরাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
হামলায় আহত সংবাদকর্মীরা হলেন, যমুনা টিভির কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোকন, ক্যামেরাপারসন জিহাদুল ইসলাম সাকিব, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান এবং ক্যামেরাপারসন ইরফান। তাদের সবাইকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়েছেন এবং হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
হামলার পর আহত সাংবাদিকরা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে কুমিল্লার ধর্মপুর এলাকার পারুল নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা ছিলেন। স্বজনদের অভিযোগ ছিল, চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগী মারা গেছেন। সেই অভিযোগের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শী হতে জানা গেছে, ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করতে সাংবাদিকরা যখন হাসপাতালের নতুন ভবনের সপ্তম তলায় উঠার চেষ্টা করেন, তখন অতর্কিতভাবে চতুর্থ তলায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আহত সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন, হামলাকারীরা হাসপাতালের ভেতরে থাকা কিছু যুবক ছিলেন, যাদের অনেকেই সাধারণ পোশাকে ছিলেন এবং তারা মেডিকেল শিক্ষার্থী বা ইন্টার্ন চিকিৎসক হতে পারেন।
যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী খোকন হামলার বিষয়ে বলেন, "আমাদের ওপর চারতলায় হামলা চালানো হয়। মারধর করে আমাদের ভবনের নিচে নিয়ে আসা হয়। তারপর অন্যরা আমাদের নিরাপদে নেয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে যৌথবাহিনী কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।"
তিনি আরও বলেন, "হামলাকারীদের সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মোবাইল ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা সম্ভব। তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।"
যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন জিহাদুল ইসলাম সাকিব বলেন, “হাসপাতালে ঢোকার আগেই আমাদের ওপর হামলা শুরু হয়। হামলাকারীদের হাতে স্ট্যাম্প ও লাঠি ছিল এবং তারা দুই দফা হামলা করেছে। এ সময় অন্যরা মোবাইলে ভিডিও করছিল।”
সংবাদকর্মীদের অভিযোগ, হামলাকারীরা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিই হতে পারেন, কারণ তারা ইউনিফর্ম পরেননি। হামলার সময় সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয় এবং ক্যামেরা ও ট্রাইপড ভেঙে ফেলা হয়।
এই বিষয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা সত্ত্বেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, এ ঘটনায় তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর হামলার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরে যৌথবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করি।”
এই ঘটনার পর সাংবাদিকরা হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে হামলার প্রতিবাদ জানান। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি মীর শাহ আলম এই হামলাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেন এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
তিনি বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা, এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনা উচিত। অন্যথায়, আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী এনামুল হক ফারুক বলেন, “এ ধরনের হামলা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। আমরা দ্রুত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স